শহীদ এম মনসুর আলীর সুযোগ্য সন্তান বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, জাতীয় সংসদের পাঁচবারের সংসদ সদস্য এবং সাবেক সফল স্বাস্থ্য মন্ত্রী জননন্দিত জাতীয় নেতা প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম। পিতার দেখানো পথে পুত্রের বিচরণ, পিতা যেমন শোষিত বঞ্চিত মানুষের রাজনীতি করেছেন ঠিক তেমনি পুত্র মোহাম্মদ নাসিম খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। দেশের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি তাঁর নির্বাচনী এলাকার অবহেলিত চর অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন। স্কুল জীবনেই মোহাম্মদ নাসিম এর রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ বাবা যেহেতু বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চার নেতার একজন সেহেতু রাজনীতি তাঁর রক্তে মিশে আছে । পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী এদেশ শোষন করতে শুরু করলে মোহাম্মদ নাসিম পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন করে ছাত্র জীবনে পিতার সাথে কারাগারে যান। ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন, ৭১ এর অসহযোগ আন্দোলনসহ দেশের ক্রান্তি লগ্নে সম্মুখ সারিতে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর জাতীয় চার নেতাকে গ্রেফতার করা হয় । ৩ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে জাতীয় চার নেতাকে কারাগারে হত্যা করা হয়। তখন প্রতিবিপ্লবীদের হাত থেকে নিজের জীবন বাঁচাতে আত্মগোপনে যান এবং নিজের পিতার লাশ দেখার সুযোগ পর্যন্ত হয়নি।
 ১৯৮১ সালের ১৭ মে জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসলে মোহাম্মদ নাসিমও দেশে আসেন এবং নেত্রীর নির্দেশ পালন করেন। জিয়ার শাসনামলে হুলিয়া মাথায় নিয়ে দেশে আসলে গ্ৰেপ্তার হন এবং ২৫,০০০/- হাজার টাকা মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে মোহাম্মদ নাসিম সারা বাংলাদেশ সফর করেন এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, জেলা, বিভাগ ও মহানগর কমিটি করে সংগঠনকে গতিশীল করেন। ১৯৯০ এ  এরশাদ বিরোধী গণ অভ্যুত্থানে তিনি দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেন।
মোহাম্মদ নাসিমকে তখন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়, সফলতার সহিত তিনি দায়িত্ব পালন করেন। আজকে আমরা যে মোবাইল ব্যবহার করছি সেটা মোহাম্মদ নাসিমের অবদান। অতীতে মোবাইল ব্যবহার এতোটা সহজ ছিল না। মোবাইল, সিম কার্ডের মূল্য এবং প্রতি মিনিটের কল চার্জ দেশের সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার চেয়ে বেশি ছিল । তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে আলোচনা করে সেই অসম্ভব কাজটি সম্ভব করেন মোবাইল, সিম কার্ড এবং কল চার্জ সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আনেন। সবাই এর সুফল ভোগ করছে।
 যখন রাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হয় তখন জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা মোহাম্মদ নাসিমকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দিলেন। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে পুলিশের অভূতপূর্ব পরিবর্তন করেন। দক্ষিনবঙ্গের অর্থাৎ খুলনা শহরে কুখ্যাত ডাকাত, মানুষ হত্যাকারী এরশাদ শিকদারকে গ্ৰেপ্তার করেন। এর ফলে খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ স্বাভাবিক ভাবে ব্যবসা বাণিজ্য ও চলাফেরা করতে পারে। আজও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ মোহাম্মদ নাসিমকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
উত্তরাঞ্চলের মানুষের কথা চিন্তা করে তিনি সর্বপ্রথম পাইপ লাইনের মাধ্যমে যমুনা সেতু দিয়ে উত্তরাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ করেন যা আজ আমরা কলকারখানা ও রান্নার কাজে ব্যবহার করছি।
২০০১ সালে যখন বিএনপি সরকার গঠন করে তখন মোহাম্মদ নাসিম নেতা কর্মীদের পাশে দাঁড়ান। আওয়ামী লীগের মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে মোহাম্মদ নাসিম নেতাকর্মীদের রক্ষা করার জন্য সামনে গিয়ে দাঁড়ান। ধানমন্ডি রাসেল স্কয়ারে পুলিশ লাঠিচার্জ করে প্রিয় নেতাকে রক্তাত করে। পাঁচ বছর লড়াই সংগ্রাম করে আওয়ামী লীগ সরকার আবার সরকার গঠন করেন। ২০১৪ সালে জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা মোহাম্মদ নাসিমকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেন। স্বাস্থ্য খাতে তিনি অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেন। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক কর্যক্রম বর্ধিত করণ, ইউনিয়ন পর্যায়ে ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল স্থাপন। এছাড়া জেলা শহর গুলোতে হাসপাতালে আইসিইউ,  বেড বৃদ্ধি ও আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করেন।
২০২০ সালের ২৩ শে মার্চ COVID-19 (Corona Virus)  মহামারি আকার ধারণ করলে সারা  বাংলাদেশ লকডাউন করা হয়। COVID-19 এর কারণে যখন মানুষ পিতা পুত্রের লাশ ফেলে রেখে চলে যান , স্ত্রী স্বামীকে হাসপাতালে রেখে পালিয়েছে সেই দুঃসময়েও মোহাম্মদ নাসিম নেতা কর্মীদের ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন, প্রত্যেকের খোঁজ খবর নিয়েছেন। ১৯ মে ২০২০ সালে সিরাজগঞ্জের মানুষের কথা চিন্তা করে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করেছেন, যেন সেখানে COVID-19 Test করা যায়।
উল্লেখ্য সিরাজগঞ্জ পিসিআর ল্যাব উদ্বোধন এবং কাজিপুর কর্মহীন মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শেষে ঢাকায় ফিরে তিনি মরণঘাতী Corona Virus এ আক্রান্ত হন এবং ১৩ জুন ২০২০ সালে মৃতু্্য বরণ করেন।
তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তিনি সফলতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। শ্রদ্ধা জানাই সৎ, সাহসী, প্রাজ্ঞ ও তাঁর দূরদর্শী এই নেতাকে। তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের অনেক আন্দোলন সফল হয়েছে। তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন তাঁর সৃজনশীল কর্মের মাঝে এবং দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে থাকার জন্য। লক্ষ কোটি রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হৃদয়ে চিরদিন বেঁচে থাকবেন তাদের প্রিয় নাসিম ভাই। আজকে এই দিনে তাঁর রূহের মাগফিরাত কামনা করি এবং তাঁর প্রতি অতল শ্রদ্ধা।
মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
প্রশাসনিক কর্মকর্তা
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ